বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ৪৩Riya Patra
রিয়া পাত্র
বিজেপির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের দেবাংশুর বিরুদ্ধে এবার তমলুকে বামেদের তরুণ তুর্কী সায়ন ব্যানার্জি। ছাত্র রাজনীতি করেছেন, আদালতে দাঁড়িয়ে লড়েছেন একের পর এক মামলা। এবার লক্ষ্য তমলুক আসন জিতে সাংসদ হয়ে শিল্পায়নে জোর দেওয়া। জোর দেওয়া রোটি-কাপড়া-মকান-এ।
তমলুকের বাম-বিজেপি-তৃণমূলের তিন প্রার্থীর কেউই এলাকার নন। একেবারে নতুন জায়গা, লোকসভা নির্বাচনে ৭ বিধানসভা ঘুরে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং সায়নের কাছে?
সায়ন: গত দেড় দু-বছরে ডিওয়াইএফআই-এসএফআই-এর একাধিক কর্মসূচিতে এই জেলায় এসেছি আমি। জায়গা চেনা হয়েছিল আগেই। তার থেকে বড়, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যম আসলে মানুষের ভাষায় কথা বলা। মানুষের সমস্যা বুঝতে পারা। তৃণমূল-বিজেপি দুই জায়গায় ক্ষমতায়। তাতে কিছু মানুষ অবশ্যই তাদের প্রচার কর্মসূচি-সভায় যাচ্ছে। আমরা কিন্তু সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে ধরছি। এখানে মানুষের মূল সমস্যা বেকারত্ব।
আপনি তরুণ প্রজন্মের প্রার্থী, যাঁরা ‘বেকার’, ‘চাকরিহীন’, তাঁদের একটা বড় অংশ আপনার ভোটার। আপনি জিতলে সুরাহা হবে কিনা, তাঁদের এই প্রশ্নের উত্তর আছে আপনার আছে?
সায়ন: দেখুন দুটো কথা। এক, এই নির্বাচন দিল্লির। এটা পলিসি মেকিং নির্বাচন। এই রাজ্যে, তমলুকে যে পরিমাণ মানব সম্পদ রয়েছে, আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারছি না। এটা পলিসির ঘাটতি। এমপ্লয়মেন্ট ক্রিয়েশন, সরকারের মাধ্যমে এবং তার বাইরে শিল্পায়নের মাধ্যমে কীভাবে করা যায়, তার আলোচনা করা হবে।
দুই, একজন সাংসদের চাকরি তৈরিতে ভূমিকা কম। কিন্তু তমলুকে এই সুবিধা রয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল সিপিআইএম-এর সময় তৈরি হয়েছে। হলদিয়ায় একটা সময় সাইকেল মিছিল দেখা যেত। শুভেন্দু অধিকারী হলদিয়া ডেভলেপমেন্ট অথরিটির মাথায় বসার পর একের পর এক কল কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। নতুন শিল্প আসেনি। হলদিয়া শিল্পায়নে এইচডি-এর ভূমিকা আছে, তাতে এমপির একটা কথা বলার জায়গা আছে।হলদি নদীর ড্রেজিং হয়নি গত এক দশকে, বড় জাহাজ আসছে না। ব্যবসা কমছে স্বাভাবিক ভাবেই। বিজেপির মন্ত্রীও কিছু করলেন না। দিল্লি গিয়ে এটাও করতে চাই। এটা হলে ব্যবসা বাড়বে হলদিয়ার, কাজ পাবেন এখানকার মানুষেরা।
সব খতিয়ে দেখে তাহলে প্রার্থী সায়নের প্রচারে বার্তা কী?
সায়ন: আমি যখন প্রচার শুরু করি তখন আমার বার্তা ছিল দূর্নীতি, সামগ্রিক বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। প্রচারে নামার পর মানুষের মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে হলদিয়া ইস্যু।তখন আমার নির্বাচনের স্লোগান ঠিক হয়, ‘জিতবে এবার সায়ন, হলদিয়াতে হবে আবার শিল্পায়ন।‘ আমরা রিভাইভ করার কথা বলছি। বোঝাচ্ছি, ‘তমলুক লোকসভা জুড়ে হবে আসল উন্নয়ন।"
অধিকারী-ঘনিষ্ঠ তমলুকের রাজনীতির ময়দান খুব একটা সহজ নয়। নেতারা এক দলের ভোট জিতে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিতে চ্যালেঞ্জ কতটা?
সায়ন: আমি বক্তৃতার শেষে মানুষকে বলছি, আমি জিতে দল বদল করব না।
একজন প্রার্থীকে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিতে এটা বলতে হচ্ছে…
সায়ন: হ্যাঁ, হচ্ছে। তার পরিস্থিতি তৈরি করেছে তৃণমূল-বিজেপি। আমাদের দলের এখনও কিছুটা ডিসিপ্লিন আছে। মানুষ অনেক বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ। আসলে অনেকেই মানুষকে খুব বোকা মনে করেন। দিব্যেন্দু অধিকারী ১০০ দিনেরমধ্যে ২২ দিন সংসদে গিয়েছেন। আমি বোঝাচ্ছি লোকসভা ভোট মেলা-খেলার জায়গা নয়।
আপনার দলের কথায় আসি, এই যে সিপিএম বিধানসভার ভোট থেকে বারবার তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে দিচ্ছে, তাতে ভোটের ময়দানে আদতে লাভ হচ্ছে কতটা?
সায়ন: তৃণমূল-বিজেপি কেউ সেভাবে নতুন প্রজন্মকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করছে না।তৃণমূলের তরুণ প্রজন্মের নামও জড়িয়ে দুর্নীতিতে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ একটা জিনিসে উৎসাহ দিচ্ছেন, সিপিআইআম একটা তরুণ দল তৈরি করতে পারে। কেউ ভাল সংগঠক, কেউ ভাল বক্তৃতা দেন, কেউ দেওয়াল লেখেন।
আপনাদের নবীন-প্রবীণ কেউই ইলেক্টোরাল বন্ড-বিষয়টার সঙ্গে অভ্যস্থ হননি। কিন্তু ভোট লড়ার এই বিপুল খরচ, আপনারা কীভাবে চালান?
সায়ন: খুব জটিল একটা বিষয়। অভিষেক ব্যানার্জির বেহালা থেকে হলদিয়ায় এসে বৈঠক করে ফিরে যেতে যে খরচ, সেটা আমার গোটা প্রচার পর্বের খরচ হতে পারে। আমাদের টাকা উঠেআসে মানুষের মাধ্যমে। কূপনে টাকা দিচ্ছেন মানুষ। কেউ কেউ প্রার্থীর হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। চায়ের দোকানে বসে ইউপিআই-এ টাকা দিচ্ছেন।
আপনাদের প্রার্থীদের অনেকের নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সমাজ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারে অর্থ সাহায্য চাইছেন…
সায়ন: নির্বাচনের জন্য একটা আলাদা অ্যাকাউন্ট থাকে। সেটা দিয়ে আমরা এই সাহায্য চাইছি।
সায়ন, আপনি প্রার্থীর পাশাপাশি আপনি একজন আইনজীবী। এই প্রায় ২৬ হাজারের চাকরি বাতিলের রায়। আইনজীবী সায়ন কী বলছেন তাতে?
সায়ন: আমি প্রশংসা করছি বিষয়টার।
এই রায় কোথাও গিয়ে কি মান্যতা দিল আপনার বিপরীতের প্রার্থী সঠিক ছিলেন?
সায়ন: এই রায় মান্যতা দিল, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যদের লড়াই ঠিক ছিল। কথা পরিস্কার, দুর্নীতি হয়েছে। লুকোবার জায়গা নেই। রাজ্য সরকার যোগ্যদের নামের তালিকা জমা দিল না। ২৬ হাজারে কোপ পড়ল। একটা অংশ টাকা না দিয়ে চাকরি পেয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চাল-কাঁকর এক রাখতে চাইছেন। তাতে তাঁর রাজনৈতিক লাভ।
তাতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরও লাভ হল না?
সায়ন: দেখুন, আজ প্রমাণিত আদালতের ভগবান বলে কিছু নেই। আমার মনে হয় না, এই রায়ের জন্য ওঁকে কেউ ভোট দেবেন। তিনি শুভেন্দু অধিকারীর ভরসায় ভোট লড়তে নেমেছেন।
সায়নের নির্বাচনের লড়াই কি তাহলে শুভেন্দুর সঙ্গে?
সায়ন: সায়নের লড়াই তৃণমূল এবং শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই। শুভেন্দু অধিকারী দুই দলে থাকাকালীনই আমাদের দলের লোকেদের ওপর অত্যাচার করেছেন।
সায়ন, ইতিহাস বলে, এই হলদিয়ায় বামেরাও এক সময় চরম অত্যাচার করেছে। মানুষ কি ভুলে গেছেন সেকথা?
সায়ন: মানুষ তো গোলাপ দিচ্ছেন, ফুল দিচ্ছেন।